রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাড়ছে বৈষম্য, মুক্তি মিলবে কিসে?

দেশে বিরাজমান বৈষম্যের প্রকটতা নিয়ে মানুষ শুধু উদ্বিগ্নই নয়, এর ক্রমবর্ধমান প্রবণতায় ব্যাপকভাবে হতাশও।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করে একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্র কেন বৈষম্যকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে? তা ছাড়া রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দানের বিষয়টি শুধু যে নৈতিকভাবেই অগ্রহণযোগ্য তা–ই নয়, সাংবিধানিকভাবেও অবৈধ। ফলে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে যিনি বা যাঁরাই এ পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন, তাঁরা বস্তুত সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। সংবিধানের ১৯ (২) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে, ‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ এ অবস্থায় উচ্চতর প্রবৃদ্ধির নামে সাধারণ মানুষকে প্রান্তে ঠেলে দিয়ে রাষ্ট্রের সিংহভাগ সম্পদ মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীর হাতে তুলে দিয়ে তাদের নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিকৌশল বাংলাদেশের সংবিধান কিছুতেই অনুমোদন করে না।

সামরিক শাসন যেমন অবৈধ কিংবা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী (পরে বিলুপ্ত) যেমন বৈধ নয়, তেমনি বিশেষ শ্রেণিগোষ্ঠীকে সম্পদ-সুবিধাদানের উদ্দেশ্যে প্রণীত নীতিকাঠামো এবং এসবের আওতাধীন সিদ্ধান্তও একইভাবে অবৈধ। ফলে, শুধু বৈষম্য হ্রাসের জন্যই নয়, সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্নেও অবিলম্বে এসব সিদ্ধান্ত বাতিল বা সংশোধন হওয়া উচিত। করোনাকালে গৃহীত যেসব বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের কারণে বিতরণকৃত প্রণোদনা তহবিলের ৬৫ শতাংশ বিত্তবানেরা, ২৩ শতাংশ মাঝারিরা এবং মাত্র ৫ শতাংশ কৃষকেরা পেল, সংবিধানের উপরিউক্ত নির্দেশনার আলোকে সেসব সিদ্ধান্তকে অন্যায্য বলতে দ্বিধা থাকার কোনোই কারণ নেই।

বৈষম্যের পরিধি এখন দুর্নীতির মতোই সর্বত্রব্যাপী হয়ে ওঠার কারণে এ নিয়ে আলোচনাও এখন ব্যাপকতা লাভ করেছে। বিবেকবান বুদ্ধিজীবী থেকে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ সবার মুখেই এ নিয়ে উদ্বেগজনক আলোচনা। কিন্তু শুধু আলোচনায় কী হবে? প্রয়োজন তো ব্যবস্থার পরিবর্তন, যার ছিটেফোঁটা ওপরে উল্লেখ করা হলো। বস্তুতই ‘পৃথিবীকে সবাই শুধু ব্যাখ্যা করেছেন, আসলে প্রয়োজন একে পরিবর্তন করা’—কার্ল মার্ক্সের বহুল আলোচিত এ উক্তি বাংলাদেশের চলমান বাস্তবতায় এতটাই প্রাসঙ্গিক, মনে হয় যেন বাংলাদেশকে সামনে রেখেই তিনি এ উক্তি করেছিলেন। শুধু আলোচনায় কী হবে? প্রয়োজন তো ব্যবস্থার পরিবর্তন, যার ছিটেফোঁটা ওপরে উল্লেখ করা হলো। বস্তুতই ‘পৃথিবীকে সবাই শুধু ব্যাখ্যা করেছেন, আসলে প্রয়োজন একে পরিবর্তন করা’—কার্ল মার্ক্সের বহুল আলোচিত এ উক্তি বাংলাদেশের চলমান বাস্তবতায় এতটাই প্রাসঙ্গিক, মনে হয় যেন বাংলাদেশকে সামনে রেখেই তিনি এ উক্তি করেছিলেন। আমরা কি আমাদের বোধ ও মনন দিয়ে তা উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগী হব?