আমার দেশ সিলেট ব্যুরো প্রধানের বৃত্তি অনুষ্ঠানে অতিথি ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী এম এ মান্নান!

আমার দেশ সিলেট ব্যুরো প্রধানের বৃত্তি অনুষ্ঠানে অতিথি ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী এম এ মান্নান!

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সাথে সম্পর্ক হৃদয়ের ও আত্মার। সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রেরণার বাতিঘর। আর আমার দেশের সাথে পথচলা ২০০৯ সাল থেকে। আমার দেশ পাঠকমেলা সিলেটের সদস্য থাকার সুবাদে প্রায় সকল কর্মসূচীতে অংশ নিতাম। তখন সিলেট ব্যুরো প্রধান ছিলেন এটিএম হায়দার ভাই, স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন ইকবাল মাহমুদ, পাঠকমেলার আহ্বায়ক ছিলেন জুরেজ আব্দুল্লাহ গুলজার ও সদস্য সচিব ছিলেন এমজেএইচ জামিল ভাই। পরবর্তীতে পাঠকমেলার পূর্নাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি পদে ডা. হোসাইন ভাই, সহ-সভাপতি মরহুম হাফিজ আদিল রশীদ হুমায়ুন ভাই, সেক্রেটারী এমজেএইচ জামিল ভাই, সহকারী সেক্রেটারী সুলায়মান আল মাহমুদ ভাই, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম ভাইসহ কয়েকজনের সাথে পরিচিত হই। এরপর থেকে আমার দেশ বলতে সিলেটে এই মানুষগুলোকেই চিনতাম।

১ম বার আমার দেশ বন্ধ হওয়ার পর সিলেটে মাহমুদুর রহমান মুক্তি সংগ্রাম কমিটি গঠন হয়। এর আহ্বায়ক ছিলেন আমার জগন্নাথপুরের কৃতি সন্তান লে. কর্ণেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ স্যার ও সদস্য সচিব ছিলেন এমজেএইচ জামিল। তখনও রাজপথে সবসময় স্বোচ্ছার ছিলাম। এরপর ২০১৩ সালে সম্পাদক ২য় বার কারাগারে গেলে সিলেটে গঠন হয় ‘মাহমুদুর রহমান মুক্তি মঞ্চ সিলেট’। এর আহ্বায়ক ছিলেন সালেহ আহমদ খসরু ভাই ও সদস্য সচিব ছিলেন এমজেএইচ জামিল ভাই। আমি অধিকাংশ কর্মসূচীতেই অংশ নিয়েছি। সেই সময় কর্মসুচীতে সিলেটের সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ তুলনামুলক কম ছিল। বিশেষ করে সিলেটের ডাক ও জালালাবাদের কয়েকজন সাংবাদিক অংশ নিতেন।

গতকাল হঠাৎ ফেইসবুকে দেখলাম আমার দেশ-এর সিলেট ব্যুরো হয়েছেন খালেদ আহমদ। উনাকেও চিনি। তবে তিনি যে আমার দেশে আগে ছিলেন সেটা কোনদিন শুনিনি। কারণ বিগত ১৫ বছরে তাকে আমার দেশ পাঠকমেলা, মাহমুদুর রহমান মুক্তি মঞ্চ কিংবা মুক্তি সংগ্রাম কমিটির কোন কর্মসূচীতে দেখিনি।

এরপর উনার ব্যাপারে একটু খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তিনি গত দুয়েক বছর থেকে সাংবাদিক সংগঠনে সক্রিয় হয়েছেন। সিলেট প্রেসক্লাবের পাশাপাশি সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছেন। সাবেক ফ্যাসিস্ট মন্ত্রীর মান্নানের সাথে তার দহরম মহরম অনেক পুরনো। এমনকি গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি মান্নান পুত্র অভির নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। অথচ ২০০৯ সালে ইকবাল মাহমুদ ভাই এই আমার দেশ পত্রিকায় নিউজ করেছিলেন ‘সুনামগঞ্জের এমপি মান্নানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ’ শিরোনামে।

আশ্চর্যের বিষয় আমার দেশ সিলেট ব্যুরো প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার মাত্র ২ দিন আগে গত শনিবার তার বাবার নামে এলাকায় অনুষ্ঠিত একটি বৃত্তি পরীক্ষায় ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী মান্নানও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বলে বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদে জানতে পেরেছি। এছাড়া তিনি ব্যুরো প্রধান হওয়ার আগেই সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে উনার ভাতিজা সাবেক মন্ত্রী মান্নানের ঘনিষ্ঠজন জুয়েলকে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। অথচ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকজন মেধাবী সাংবাদিকও সিভি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদ সাহেব ঢাকাকে ম্যানেজ করে উনার ভাতিজাকে জেলা প্রতিনিধি প্রায় কনফার্ম করে ফেলেছেন। এমনকি উনার ভাতিজা জুয়েল ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার সকল উপজেলা থেকে সিভি নেয়া শুরু করেছেন। বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে শুধু উনার অনুগতদের সিভি নিচ্ছেন বলে কয়েকজন জানিয়েছেন।

মাহমুদুর রহমান যেখানে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হয়েছেন। সেখানে উনার পত্রিকায় এমন ফ্যাসিবাদের দোসর ও যোগদানের আগেই আত্মীয়করণমুখী একজনকে ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। এর আগে উনাকে নাকি আমার দেশ থেকে একবার বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে শুনেছি। যাকে বরখাস্ত করা হয় তাকেই নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি আমার দেশ পত্রিকার নীতি আদর্শের পরিপন্থীভ। সিলেটে আমার দেশ এর ব্যুরো প্রধান হওয়ার মতো বিএনপি-জামায়াতপন্থী সিনিয়র সাংবাদিকের কি এতই অভাব পড়েছে? আমার দেশ সম্পাদক মহোদয়, অলিউল্লাহ নোমান ভাই ও আমার দেশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাছে এই প্রশ্নটা রাখলাম। আমার দেশের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করেছি তাই বিবেকের দায় থেকে এই লেখা।