বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ক্যান্সার

প্রধান উপদেষ্টা জনাব ইউনুস সাহেব আজকে চাটগাইয়া ভাষায় বক্তৃতা দিছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আজকে রোজা রাখছিলেন। ওনার কথা হইতেছে ইফতার করবো কিন্তু রোজা রাখবো না এটা কেমন কথা?

আরাকান হচ্ছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ফিলিস্তিন। আজকের দিনটা এই মজলুম মানুষদের জন‍্য একটা স্মরণীয় দিন।

প্রসঙ্গত বলি, রোহিঙ্গা ইস্যু সামনে আসলে বাংলাদেশের তথাকথিত বামপন্থীদের মুখোশ খুলে যায়।

বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ একটা ক্যান্সার, যেটা সিলেটী, উর্দুভাষী, চাকমা, চাটগাইয়া, মারমাসহ কোন জাতিসত্তার প্রকৃত স্বীকৃতি আসলে দিতে চায় না।

এরা সবাইকে বাঙ্গালী বানাইতে চায়।

এদেশের তথাকথিত বামরা রোহিঙ্গা শব্দটাকে একটা গালি হিসাবে ব্যবহার করে।

তথাকথিত বাম বলছি এ কারণে যে এটা কোন বামপন্হা না। দুনিয়াতে এরকম উগ্র জাতীয়তাবাদী কোন কমিউনিস্ট পার্টি নাই যা বাংলাদেশে আছে।

এরা সারাদিন বাঙ্গালী সংস্কৃতির ব‍্যবসা করবে আর বাচ্চাকে পড়াবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। গরীব বাঙ্গালীর সামাজিক/ অর্থনৈতিক উত্তোরন বন্ধ করবে ইংরেজী মাধ‍্যমে গরীব-মধ‍্যবিত্তের শিক্ষার ব‍্যবস্হা রোধ করার মাধ‍্যমে।

ইংরেজি শিক্ষা যদি সহজলভ‍্য হয়— গ্রামের একটা ছেলে যদি তার স্কুলে ফ্রি ইংলিশ ভার্সন স্কুলে পড়তে পারে তাহলে এদের ব‍্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।

ভালো ইংরেজী বলতে না পারার কারণে অনেক গরীব শিক্ষার্থী ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় না, সামাজিকভাবে নিজেকে নীচু মনে করে— ভালো চাকরী পায় না। কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে ইংরেজী শিখে। তারপরও উচ্চারণের কারণে কথা বলতে বিব্রত বোধ করে।

এই সমস্যার পাটাতন হচ্ছে ষাটের দশক থেকে আমাদের মধ‍্যে বাঙলার প্রতি একটা অবসেশন তৈরী করা হইছে— এটা এমন এক বাঙলা যেটায় ঢাকার এলিট বাঙালী জাতীয়তাবাদীরা ছাড়া আর কেউ কথা বলে না।

এই আধিপত্য ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে। বাংলাদেশের বাঙলায় মানুষ অনেক লিখছে। সাহিত‍্যচর্চাও হচ্ছে। এ ফুল ফুটবে ভালো মতো, এই আশা আছে।

ইংরেজীর প্রতি আমাদের মধ‍্যে যে অবজ্ঞা তৈরী করা হইছে তাও দূর হচ্ছে প্র‍্যাক্টিকাল কারণে। বাঙালী জাতীয়তাবাদের যে ক‍্যন্সার আমাদের আক্রান্ত করছে বছরের পর বছর তার নাগপাশ থেকে ছুটকারা মিলছে।

টিভিতে আমরা আমাদের মুখের ভাষার বাঙলা শুনছি। আশা করি বাঙলাদেশে একদিন উর্দু, চাকমা, রোহিঙ্গা, গাড়ো ভাষার নাটক সিনেমা হবে। তাদের জন‍্য রেডিও স্টেশন থাকবে।

সরকার ইংরেজী মাধ‍্যমের শিক্ষাকে সহজলভ্য করবেন। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপের জন‍্য আলাদা ও/ এ লেভেল পরীক্ষা নেয়। আমাদেরও সেরকম হবে একদিন।

সারাদিন বাঙলা-বাঙলা করে আমরা আমাদের গরীব-মধ‍্যবিত্তকে সামাজিক-অর্থনৈতিক উত্তরণের যে সুযোগ থেকে বন্চিত করছি তা বন্ধ হোক। রাস্ট্র হোক সবার জন‍্য। এটাই প্রকৃত বামপন্হা।

জীবনে উন্নতি করতে আমাদের যদি ভালো চাইনিজ শিখতে হয় কোনদিন তবে তাই করতে হবে। তবে তার আগে বাঙলাকে বাঙলার জায়গায় রেখে আমাদের বাকি দুনিয়ার সাথে নিজেকে ইন্ট্রিগ্রেট করতে হবে। সেটার উপায় সব ভাষাকে সম্মান করে যে ভাষায় আমার জীবনমানের উন্নতি হবে সেটা শেখার মধ‍্যেই আছে।