ফার্স্টক্লাস বন্দি ?

একটি খবর আপনাদের নজর এড়িয়ে গেছে হয়তো। চাদপুর কারাগারে একটি কক্ষ আধুনিকায়ন হচ্ছে। সেখানে টাইলস লাগানো হচ্ছে, হাইকমোড লাগাচ্ছে। এসিও লাগাবে নিশ্চয়ই

এই উন্নয়নের কারণ হলো- চাদপুর কারাগারে সাবেক অবৈধ মন্ত্রী দীপুমনি থাকবে।

ফার্স্টক্লাস বন্দি বলে কথা। সাবেক সাংসদ, মন্ত্রী। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। নিজের পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। পরবেন পছন্দের পোশাক। থাকবে লেখালেখি, বইপড়া এবং সংবাদপত্র পড়ে দেশ ও দুনিয়া সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকার সুযোগও।

দুনিয়াটা খুব অদ্ভুত। আপনি হাজার হাজার মানুষ খু*নের অংশ হবেন, কোটি কোটি মানুষের ভোটাধিকার হরণ করবেন, লাখো মানুষকে পরিবার ছাড়া করবেন, গুম খু*নের কুশীলব হবেন তাতেও সমস্যা নাই। যেভাবেই হোক- আপনি একবার সংসদ সদস্য যেহেতু হয়েছেনই আপনি বন্দি থাকলেও আয়েশেই থাকবেন।
আপনার জন্য সব ব্যবস্থা থাকবে চকচকে।

আমি অনেক মানুষকে দেখেছি- যাদের টাকা পয়সা যশ সম্মানের অভাব ছিলোনা। তারপরেও তারা কেন ক্ষমতার পেছনে ছুটে। হয়তো এজন্যেই। ক্ষমতা আপনাকে একটা ইটারনাল বিলাসির নিশ্চয়তা দেয়। সেটা কারাগারে হলেও। এবং সেই ক্ষমতা যেভাবেই অর্জিত হোক, তাতে সমস্যা নাই।

অথচ এই দীপুমনিদের পাপের ফিরিস্তি বিরাট লম্বা।
প্রথম দফায় ছিলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সর্বদা উড়তেন। ৪ বছরে ১৮৭ বার নাকি বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় খরচে।

এগুলা তো সামান্য বিষয়। দীপুমনির ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেয়া হলফনামা আর ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে দেয়া হলফনামার একটা বিশ্লেষণ করলে দেখবেন- মহিলার কি দারুণ উন্নতি ঘটেছে। যদিও হলফনামায় বাস্তবে যত সম্পদ আছে তার হয়তো ১% প্রকাশ করে৷ সাইফুজ্জামান জাবেদের হলফনামায় তো আর লন্ডনে শয়ে শয়ে বাড়ি কিনে রাখার উল্লেখ ছিলোনা।

দীপুমনি ২০০৮ সালে হলফনামায় লিখেছিল- তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ। ৩০ হাজারের আসবাবপত্র। ২ লাখ ৭০ টাকা নগদ এবং ১ লাখ টাকার স্বর্ণ আছে। ১ লাখ টাকা দামের একটা গাড়ির উল্লেখও ছিল তার সেই হলফনামায়। ছিলোনা কোন ফ্ল্যাট বা অন্যান্য সম্পদ। জাস্ট এতটুকুই।

সেই দীপুমনি ২০২৪ সালের নির্বাচনী হলফনামায় জানিয়েছে-
*শেয়ার থেকে বার্ষিক আয় ৩ লাখ টাকা।
*অন্যান্য খাত থেকে আয় ১কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৭০ টাকা
* নগদ আছে- ৬৬ লাখ ৮৯ হাজার দুইশত আটানব্বই টাকা
* বিদেশী টাকা আছে- ৪৪০ ডলার, ২২৫ পাউন্ড।
* ব্যাংক ডিপোজিট- ৬ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৬ টাকা
* ডিপিএস- ১ কোটি ৪৪ লাখ ২২ হাজার ২৫৭ টাকা
* গাড়ি ৬০ লাখ টাকা টয়োটা হার্ড জীপ ঢাকা মেট্রো-ঘ-২১-২৯৯২
* স্বর্ণ ৯ লাখ টাকার
* আসবাব আছে ১ লাখ টাকার।
* অকৃষিজমি আছে- ৩৪ লাখ ১ হাজার ৯৫৭ টাকার
* তিনটা ফ্ল্যাট আছে যার মূল্য ৩ কোটি ৬০ লাখ।
কোন ঋণ নাই। এগুলা হলো দীপুমনির নিজের সম্পদ। তার আত্মীয়স্বজন বা স্বামীর সম্পদ এখানে উল্লেখ করা হয়নি।

এই দীপুমনি মেঘনা নদী থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার বালু অবৈধভাবে বিক্রি করাইছে তার পাপের সহযোগী লক্ষীপুর ইউপির চেয়ারম্যান অভিনেতা শান্ত খানের বাপ সেলিম খানকে দিয়ে। (সেলিম খান আর শান্ত খানকে ৫ অগাস্ট জনতা গণধোলাই দিয়ে মেরে ফেলছে)

চাদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২ একর জমি অধিগ্রহণে দীপুমনির বিরুদ্ধে ৩৫৯ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আছে। এটা নিয়ে ২৩ সালে চাদপুরের তৎকালীন ডিসি অঞ্জনা খান মজলিসের সাথে দীপুমনির ঝামেলাও হয়েছিল।

যাইহোক, দীপুমনিদের পাপ বিস্তৃত, বিশাল। একজন সাধারণ অপরাধীর পক্ষে দীপুমনিদের পাপের লক্ষভাগের এক ভাগ করাও সম্ভব না। কিন্তু তারপরেও দীপুমনিরা রাষ্ট্রের ১ম শ্রেণীর বন্দি। বন্দিকালেও তাদের ভালো রাখতে রাষ্ট্রের তোড়জোড়ের অভাব নাই।
অথচ এই দীপুমনিদের লাগামহীন লুটপাটের কারণেই দেশের মানুষ কারাগারের বাইরেও দীপুমনিরা কারাগারে যেমন জীবন কাটাবে তেমন জীবনের স্বপ্নও দেখতে পারছেনা। দীপুমনিরা দেশের মানুষের সম্পদ এবং স্বপ্ন দুইই কেড়ে নিয়েছে। তাও দীপুমনিদের ভালো রাখতে রাষ্ট্রের তৎপরতা চলতে থাকুক। আমরা তাদের ভালো রাখতে কুকুরের জীবন কাটিয়ে ট্যাক্স দিয়ে যাব।