বসুন্ধরা গ্রুপ দেশে বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। পাঁচটি মিডিয়া রয়েছে। তাদের আছে একটি টেলিভিশন, দুইটি বাংলা জাতীয় দৈনিক, একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক। আছে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
ভূমিধস্যু হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে। বসুন্ধরা হাউজিং দেশের বড় বেসরকারি হাউজিং প্রতিষ্ঠানও বটে।
২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে বিএনপির ঘনিষ্ঠজন হয়ে উঠে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক শাহ আলম। ২০০৫ সালে প্রকাশিত দৈনিক যায়যায় দিন
পত্রিকার বিনিয়োগকারী হিসেবেও সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল। খ্যাতি ছিল বিএনপির তৎকালীন চেয়ারপার্সনের কার্যালয় হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে।
চার দলীয় জোট সরকারের সময় বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলা নিয়ে বেশ হৈ চৈ পড়েছিল। বড় টাকা ওয়ালা বলে কথা। তার লোমও কেউ ছুঁতে পারেনি।
সাব্বির ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম সন্তান। ভাল পড়ালেখা করেছিলেন। টেলিকমিউনিকেশনে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেখানে ভাল চাকুরিও করেছেন। অদম্য ইচ্ছে ছিল দেশে ফিরে দেশের জন্য ভাল কিছু করা। নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে বসুন্ধরা গ্রুপের সাথে যৌথ মালিকানায় একটি টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কষ্টে অর্জিত টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। পরবর্তীতে বনিবনা না হওয়া টাকা ফেরত চাইতে গেলে মেরে দোতলা থেকে ফেলে দেওয়া হয়। বসুন্ধরার অফিসের নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়েছিল।
আমার জানামতে সাব্বিরের পরিবার by born BNP সমর্থক। ছেলে হত্যার বিচার না পেয়ে তিনি আল্লাহর কাছে সব ন্যাস্ত করেছেন।
১/১১-এর জরুরি আইনের সময় পালিয়ে যান। তাদের অনুপস্থিতে সাব্বির হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতে ২০ কোটি টাকা ঘুষ নেন-দেনের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। এছাড়া আরো কয়েকটি মামলা হয়েছিল বসুন্ধরার বিরুদ্ধে। দেশের শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিবাজের ৫০ জনের তালিকায় নামও ছিল তখন।
অনুপস্থিতির কারণে সম্পত্তি ক্রোক হয়েছিল।
১/১১-এর পর তাদের আইনজীবী ছিলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক (পরবর্তীতে বিতর্কিত বিচারপতি)। আওয়ামী লীগ তখন ক্ষমতায়। জরুরী আইনের সময় সম্পদের হিসাব না দিয়ে পলাতক থাকার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাজা হয়েছিল।
দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত মামলায় কারাগারে না গিয়ে আপিলের সুযোগ নেই। শাহ আলম ইতিহাস গড়লেন মানিক ও শেখ হাসিনার কল্যাণে। কারাগারে না গিয়ে হাইকোর্ট তাকে খালাস দিল সাজাপ্রাপ্ত মামলায়। দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা অতীতে ঘটেনি।
শেখ হাসিনার পুরো শাসনকালে ফ্যাসিবাদের একনিষ্ঠ সেবক ছিলেন। জুলাই গণবিস্ফোরণের সময় শেখ হাসিনার সাথে মিটিংয়ে হুঙ্কার দিয়েছিলেন যে কোন মূল্যে তাকে ক্ষমতায় রাখা হবে।
৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের পর সব পাল্টে যায়। ফ্যাসিবাদের সেবক নঈম নিজাম পালিয়ে যান। নঈম নিজাম ছিলেন তার মিডিয়া গ্রুপ তদারকির দায়িত্বে। ফ্যাসিবাদের সাথে সেতুবন্ধনের দায়িত্বও ছিল নঈম নিজামের। শুধু তাই নয়, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সাথে বসুন্ধরা গ্রুপের বৈঠকের মধ্যস্থতায়ও দেখা গেছে নঈম নিজামকে।
৫ আগষ্টের পর মিডিয়া গ্রুপে দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও বিএনপির মিডিয়া সেল এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা আমাদের বন্ধু কাদের গণি চৌধুরীকে। এতে বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়ার চরিত্র কিছুটা পাল্টাতে থাকে।
ইদানীং শুনলাম কাদের গণি চৌধুরীর জায়গায় আমার সাবেক কলিগ, পুলিশের সাবেক এডিশনাল এসপি বন্ধু গিয়াস উদ্দিন রিমনকে। তাকে বিশেষ একটি জায়গা থেকে এখানে এপয়েন্টের জন্য মনোনীত করা হয়েছে বলে শোনা যায়। এই বিশেষ জায়গার ঘনিষ্ঠ সাবেক সহকর্মী গিয়াস উদ্দিন রিমনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের স্বার্থ রক্ষায় কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
তবে আমি এটা বিশ্বাস করি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকদের একটা চুলও ছিঁড়তে পারবে না এই সরকার। কোন সরকারই পারবে না। আগামী দিনে যারা সরকারে যাওয়ার সম্ভাবনা তারাই এখন প্রটেক্টর নিয়োগ দিচ্ছেন অ্যাডভান্স।
দেশে আইনের শাসন কখনো আসবে না। আইন সবার জন্য সমান, এই ধারনা বাংলাদেশে প্রয়োগ নেই।
১/১১-এর পর বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন, ভবিষ্যতেও দেখানোর হ্যাডম তৈরি করেছেন।
সুতরাং এসব ওয়ারেন্ট ফওয়ারেন্ট সবই হাস্যকর মনে হচ্ছে আমার কাছে।