বাউলদের উপর হামলা: আমাদের সহনশীলতার সংকটই কি বড় বিপদ?

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বাউলরা শুধু একজন শিল্পী নন—তারা মানবতা, সাম্য, ভালোবাসা ও মুক্তচিন্তার জীবন্ত প্রতীক। লালন থেকে শুরু করে আজকের নতুন প্রজন্মের বাউলগান—এসব কিছুই আমাদের হাজার বছরের লোকজ ঐতিহ্যকে ধারণ করে চলেছে। তাই বাউলদের ওপর হামলার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো কেবল কিছু ব্যক্তির উপর আক্রমণ নয়, বরং আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও সহনশীলতার ওপর সরাসরি আঘাত।

এই সমাজে মতের অমিল থাকা স্বাভাবিক। বাউলদের দর্শন অনেকের চিন্তার সঙ্গে না-ও মিলতে পারে। কিন্তু ভিন্ন মতকে আঘাতে দমন করা কখনোই সভ্য সমাজের পথ হতে পারে না। বাউলরা দীর্ঘদিন ধরে মানবতার কথা বলেছেন, ধর্ম-বর্ণের বিভেদ ভুলে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখার শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁদের প্রতি আক্রমণ আমাদের সামাজিক মানসিকতার সংকটকে স্পষ্ট করে দেয়।

যে দেশে বাউল গানের সুর মানুষকে শান্তি দেয়, যেখানে লালনের দর্শন ধর্মীয় উগ্রতা আর হিংসার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শক্তি দেয়, সেখানে শিল্পীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা। হামলার পেছনে যারা থাকুক, তাদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি—শুধু ন্যায়বিচারের জন্য নয়, সাংস্কৃতিক ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্যও।

আমাদের মনে রাখতে হবে—যে সমাজ ভিন্ন মত, ভিন্ন সৃষ্টিশীলতা কিংবা সংস্কৃতিকে জায়গা দিতে পারে না, সে সমাজ কখনই টেকসই শান্তি পায় না। তাই আজ বাউলদের সুরক্ষার প্রশ্ন আসলে আমাদের নিজস্ব সহনশীলতার পরীক্ষা। আমরা কি এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে সংস্কৃতি অবাধে বিকশিত হবে, নাকি এমন বাংলাদেশ যেখানে ভিন্নতা দমন করা হবে?

এ দেশের মানুষের আত্মার গান যারা গেয়ে বেড়ান, তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষার দায় আমাদের সবার। কারণ বাউলদের উপর আঘাত মানে আমাদের মৌলিক মানবিকতার উপরই আঘাত।