রাজনীতিতে নৈতিকতার ক্ষয়: বরিশালের ঘটনাকে ঘিরে কিছু কথা

বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ আব্দুল্লাহ ভাইয়ের সঙ্গে অতীতে ঘটে যাওয়া যে কোন অবমাননাকর বা ঘৃণ্য আচরণ—তা ব্যক্তি হিসেবে হোক বা রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে—গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র নিন্দার দাবিদার। আমাদের সমাজে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা যেমন গণতন্ত্রের ভিত্তি, তেমনি রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখা তার মেরুদণ্ড। এই দুটির যেকোনো একটি ভেঙে পড়লে রাজনীতি আর জনসেবার জায়গায় থাকে না; তা পরিণত হয় বিদ্বেষ, অপমান আর ক্ষমতার অহংকারে।

আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি বড় সমস্যা—বিরোধী মতকে প্রতিপক্ষ নয়, যেন ব্যক্তিগত শত্রু হিসেবে দেখা। এর ফলে রাজনৈতিক মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর মতের লড়াইকে ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ, কুৎসা রটানো বা অপমানজনক আচরণ দেখা যায়, যা একধরনের সামষ্টিক অসুস্থতা ছাড়া কিছুই নয়।

ফুয়াদ আব্দুল্লাহ ভাই বা যেকোনো রাজনৈতিক সক্রিয় ব্যক্তির প্রতি অশোভন আচরণ শুধু একজন মানুষের প্রতি অন্যায়ের নাম নয়—এটি আমাদের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের মান ও নৈতিকতার ওপর আঘাত। আজ একজনকে অপমান করলে, কাল অন্যজন আক্রান্ত হবেন; আর সবচেয়ে বিপদজনক হলো, এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনীতির প্রতি আস্থা কমে যায়।

নেতিবাচক রাজনীতি কখনো দীর্ঘমেয়াদে লাভ দেয় না। মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে—তাই হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেখানে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে সবাই তার পাশে দাঁড়াতে পারে; যেখানে আক্রমণ নয়, যুক্তিই হবে বিরোধিতার ভাষা; যেখানে ব্যক্তি নয়, নীতি হবে আলোচনার কেন্দ্রে।

বরিশালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা যারা ন্যায়, মানবিকতা ও রাজনৈতিক সৌজন্যে বিশ্বাস করি, তাদের দায়িত্ব হলো স্পষ্টভাবে এমন আচরণের বিরোধিতা করা—ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে। কারণ, রাজনীতির মান রক্ষা করা মানে আমাদের সমাজের মান রক্ষা করা।

সেই জায়গা থেকেই এই নিন্দা—অতীতের যেকোনো অশোভন, ঘৃণ্য বা অপমানজনক আচরণের বিরুদ্ধে।

আমরা চাই, আগামীর রাজনীতি হোক সম্মান, শিষ্টাচার ও যুক্তির ভিত্তিতে।