দিপু দাস আর বেঁচে নেই। ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে তাঁকে প্রকাশ্যে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে—এই নির্মম সত্য এখন দেশের বিবেকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি আমাদের সমাজে ক্রমবর্ধমান উন্মাদনা, গুজবনির্ভর সহিংসতা এবং রাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তার এক ভয়াবহ বহিঃপ্রকাশ।
ধর্ম অবমাননের অভিযোগ থাকলেই কি একজন মানুষ তার নাগরিক অধিকার হারায়? আইন কি তখন কার্যকারিতা হারায়? বিচার কি তখন জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়? দিপু দাসের মৃত্যু এই প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক—ধর্ম, বর্ণ বা পরিচয় নির্বিশেষে—জীবনের নিরাপত্তার অধিকারী। অথচ বাস্তবতা হলো, সংখ্যালঘু পরিচয় আজ অনেকের জন্য ঝুঁকির নাম। দিপু দাসকে হত্যা করা হয়েছে কারণ তিনি দুর্বল ছিলেন, কারণ তাকে সহজেই “অপর” বানানো গেছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল গুজব। যাচাইহীন অভিযোগ, সামাজিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা, এবং উন্মত্ত জনতার বিচার—এই তিনের সমন্বয়ই আজ সবচেয়ে বড় হুমকি। ধর্ম কখনোই সহিংসতার অনুমতি দেয় না; বরং ধর্মের নাম ব্যবহার করে যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারাই ধর্মকে অপমান করেছে।
রাষ্ট্র এখানে কেবল দর্শক হতে পারে না। এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। দোষীদের দ্রুত শনাক্ত ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হলে বার্তাটি হবে ভয়ংকর: এই দেশে গুজব ছড়িয়ে মানুষ মারলেও পার পাওয়া যায়।
দিপু দাসের মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আইনের শাসন ভেঙে পড়লে প্রথম শিকার হয় সংখ্যালঘুরা, আর শেষ পর্যন্ত নিরাপদ থাকে না কেউই। আজ প্রতিবাদ না হলে, কাল আরেকটি নাম যোগ হবে এই তালিকায়।
এই হত্যার বিচার কেবল একজন মানুষের জন্য নয়; এটি রাষ্ট্রের নৈতিকতা, সংবিধানের মর্যাদা এবং সমাজের ভবিষ্যতের প্রশ্ন।
দিপু দাসের মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারে না।