এই গল্পটাও আমাদেরকে বলেন?

বিরোধী দল বিএনপিকে নিয়ে রিপোর্ট, সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লেখার হিড়িক চলছে। . লেখাগুলোর মূল বিষয় হচ্ছে: বিএনপি একটা খারাপ দল. ওরা চাঁদাবাজি করে. কোর্টে মারামারি করে. বাংলাদেশে এখন একটা স্বাধীন দেশ. স্বাধীন দেশে বাকস্বাধীনতার এই চর্চা বিএনপিকে সামনের দিনগুলোতে লেখা ও কথা দিয়ে মোকাবিলা করেই এগোতে হবে. বিএনপিকেও নিজের দলে শৃঙ্খলার ঘাটতি থাকলে, শৃঙ্খলা আনতে হবে.

তবে আমার প্রশ্ন অন্য জায়গায়। আমি বাংলাদেশের মিডিয়ার কাছে জানতে চাই গণহত্যা চালানো, ভ্যানের উপর লাশের পর লাশ ছুড়ে দেয়ার পিছনে কুশীলব কারা ?

পাঠক হিসেবে আমি আরো জানতে চাই জেলায় জেলায় ও রাজধানীতে প্রাক্তন শাসক দলের কারা করা গণহত্যায় অংশ নিয়েছে। জুলকারনায়েন সায়ের যে বেওয়ারিশ কবরের কথাগুলো বলছে ঐগুলা কাদের কবর? কিভাবে আসলো?

আয়নাঘর থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শিকার ভিক্টিমদের বক্তব্য ও ইন্টারভিউ প্রচার করছেন ভালো, পাঠক হিসেবে আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই এর পেছনের কুশীলব কারা। এদের নাম কি? চেহারা কেমন?কোন বাহিনীতে, কোন পোস্টে পোস্টিং ছিল. সিভিলিয়ান কারা এই মানুষ গুম করার কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করত?

জুলাই গণহত্যা নিয়ে কয়টা ইনডেপথ রিপোর্টিং আছে ?

তার মানে কি এই আমি সমালোচনা করছি বিএনপি খারাপ এই ম্যাসেজ জেনারেট করা লেখালেখি করার? মোটেও না. কিন্তু আমি বলতে চাই যে ” বিএনপি খারাপ” এই ধরণের লেখালেখি স্বৈরাচার আমলের লেখালিখির খাসলত। আপনি ২০০৬-২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম দুটি পত্রিকা ( একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি ) নিন.

দেখে যান বিএনপি সম্পর্কে কি লিখেছে , তাদের শত শত রিপোর্টে? একই কথা বিএনপি খারাপ।

অন্যদিকে তৎকালীন সরকার পক্ষের কোনো কিছু লিখতে হলে একশত বাহানা – ভয় লাগে, ধরে নিয়ে যায় যদি, ডিপিএস তুষার ভাইয়ের ফ্ল্যাটে যাবো, আরে যা- আওয়ামীলীগ তো এটলিস্ট সেকুলার।

তার মানে এই না যে আওয়ামীলীগ ও সরকারের বিৰুদ্ধে রিপোর্ট হয়নি. অবস্যই হয়েছে , শুধু বাদ গেছে – শেখ হাসিনা ও তার পরিবার, আইজি , ডিআইজি, সচিব, দলের সাধারণ সম্পাদক — এই লিস্ট অনেক লম্বা। এদের বাদ দিয়ে সাংবাদিকতা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত কোনো সাংবাদিক আমাদের জানাতে পারলোনা , কেন বেনজিরকে তার পরিবার শুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে যত অফিসার যুক্তরাষ্ট্রের শ্যাংশনে পড়েছে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড নিয়ে কোন রিপোর্ট আছে?

কোনো রিফ্লেক্টিভ রিপোর্টিং নাই কিভাবে পনেরো বছর ধরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনতম রিপ্রেশন এর মুখে বিএনপি এতটা শক্তিশালী হয়ে টিকে আছে. নাই কোনো রিপোর্ট এই ব্যাপারে। কারণ তাহলে দলটির প্রশংসা হয়ে যায়.

কিন্তু পাঠক হিসেবে আমারতো জানতে ইচ্ছে করে কিভাবে বিএনপি টিকে থাকলো? কেন ২০/২৫ বছরের হাজার হাজার ছেলে যারা তারেক রহমান দেশ ছাড়ার সময় ছিল শিশু , এখন তারেক রহমান বলতে অজ্ঞান। পাঠকদের জানার অধিকার আছে এই ব্যাপারে।

মোটকথা বিএনপিকে নিয়ে সাংবাদিকতার ফ্রেমিং এর পিছনের উদ্যেশ্যে প্রোথিত আছে ক্ষমতা কেন্দ্রিক সাংবাদিকতার আগ্রহের কাছে। এই আগ্রহের ফ্রেমওয়ার্কে বিএনপিকে কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবেনা।

বিএনপিকে নিয়ে করা সাংবাদিকতার ফ্রেমিং বিএনপিকে একটা টাবুতে রূপান্তরিত করেছে । যেন ভালো কিছুই এই দলের পক্ষে করা সম্ভব নয়. ব্যাপারটা কি আসলেই এতো সাদা- কালো?

এই ফ্রেমিং তো কাজ করছেনা।

আর শেষ কথা ২০০৩/৪ থেকে বিনপি/ তারেক রহমান / হাওয়া ভবন নিয়ে আমাদের যারা সাংবাদিকতার মাধ্যমে গল্প শুনিয়েছেন তাদের বেশিরভাগকেই আজকে ছাত্র- জনতা চিহ্নিত করেছে গণহত্যায় সমর্থন দেয়া সাংবাদিক হিসেবে। এইটা মনে হয় কাকতলীয়!

আমি কি বলতে চাচ্ছি বিএনপি , তারেক রহমান ভালো ? মোটেও না. আমি বলতে চাচ্ছি পাঠক হিসেবে আমার জানার আগ্রহ আছে কেন আপনারা যাদেরকে একযুগের বেশি সময় ধরে খারাপ বলে আসছেন, তাদের লক্ষ লক্ষ সমর্থক আছে? এই গল্পটাও আমাদেরকে বলেন। আমরা তাইলে সমাজটাকে আরেকটু ভালো বোঝার চেষ্টা করতে পারি।