বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে মাজার অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। সুফি সাধক ও অলিদের মাজার কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জায়গা নয়, বরং এগুলো ছিল এদেশে ইসলামের বিস্তার, লোকসংস্কৃতির বিকাশ এবং সামাজিক সহাবস্থানের প্রতীক। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ সেখানে শান্তি, মানসিক প্রশান্তি ও নিরাপত্তার খোঁজে যায়।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে সাম্প্রতিক সময়ে মাজার ভাঙচুরের ঘটনা বেড়েছে। এ ধরনের হামলা কেবল একটি স্থাপনার ক্ষতি নয়, বরং আমাদের ঐতিহাসিক স্মৃতি, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক সম্প্রীতির ওপর আঘাত।
কেন মাজারকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়?
চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলো সুফি সাধকদের শিক্ষা সহ্য করতে পারে না। তারা মনে করে মাজার ইসলামবিরোধী, অথচ বাংলার মাটিতে ইসলামের প্রসারই হয়েছে সুফিবাদের মানবিক ও শান্তিপূর্ণ দর্শনের মাধ্যমে। তাই মাজার ভাঙচুর আসলে সংকীর্ণতা আর অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ।
সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষতি
একটি মাজার কেবল ইট-পাথরের নির্মাণ নয়। এটি গান, কবিতা, বাউল দর্শন, দরবারি আচার—সব মিলিয়ে এক ধরনের সাংস্কৃতিক ভাণ্ডার। মাজার ধ্বংস মানে এই ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা। একই সঙ্গে এটি সমাজে বিভাজন বাড়িয়ে দেয়, কারণ মাজারকে ঘিরে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে অংশ নেয় নানা আয়োজনে।
আমাদের করণীয়
রাষ্ট্রের দায়িত্ব কেবল আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষায় মানবিক মূল্যবোধের চর্চা, গণমাধ্যমে সচেতনতা তৈরি, এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটানো জরুরি। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও মাজারকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে।
শেষ কথা
মাজার ভাঙচুরের মাধ্যমে আসলে আমাদের নিজস্ব ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। সুফি সাধকেরা যে ভালোবাসা, শান্তি ও সহনশীলতার শিক্ষা দিয়ে গেছেন, সেটাই আজ আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই মাজার রক্ষা মানে শুধু ধর্মীয় স্থাপনা রক্ষা নয়, বরং আমাদের ঐক্য, মানবিকতা ও বহুত্ববাদী চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখা।